তারিক ইসলাম:
পরিবেশ, প্রতিবেশ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় ইউক্যালিপটাস ও আকাশমনি গাছের চারা রোপণ ও বিক্রি নিষিদ্ধ করেছে সরকার।
বৃহস্পতিবার পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের বন-১ অধিশাখা এই নিষেধাজ্ঞা দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে।
সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অঙ্গীকার পূরণে সরকারি, বেসরকারি সংস্থা ও ব্যক্তি পর্যায়ে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচিতে এখন থেকে এই ‘আগ্রাসী’ প্রজাতির গাছের চারা রোপণের পরিবর্তে দেশি প্রজাতির ফলদ, বনজ ও ওষুধি গাছের চারা রোপণ করে বনায়ন করতে হবে।
তার আগে গত ১২ নভেম্বর পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বনবিভাগকে ইউক্যালিপটাস ও আকাশমনি গাছ না লাগানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন।
বৃহস্পতিবার মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে,
ইউক্যালিপটাস ও আকাশমনি গাছ মাটি থেকে অনেক বেশি পানি শোষণ করে, ফলে মাটির আর্দ্রতা কমে যায় এবং শুষ্ক বা মৌসুমী জলবায়ুর এলাকায় এটি মারাত্মক ক্ষতির কারণ হয়।
এই গাছের পাতায় থাকা বিষ গোড়ায় পড়ে মাটিকে বিষাক্ত করে তোলে, যার ফলে উর্বরতা নষ্ট হয়, চারপাশে অন্য কোনো গাছ সহজে জন্মাতে পারে না।
এ দুটি প্রজাতির গাছ স্থানীয় জীববৈচিত্র্যের জন্য হুমকি, কারণ বহু দেশি গাছ, পোকামাকড় ও পাখি এই গাছে বাসা বাঁধে না বা খাদ্য খুঁজে পায় না।
তাই পরিবেশ সুরক্ষা এবং প্রাণবৈচিত্র্য রক্ষায় সকল সংস্থা ও নাগরিককে দেশি প্রজাতির বৃক্ষরোপণ প্রাধান্য দিতে আহ্বান জানিয়েছে মন্ত্রণালয়।
ইউক্যালিপটাস গাছ মাটির গভীর থেকে বিপুল পরিমাণ পানি শোষণ করে নেয়, যা কৃষি জমির আর্দ্রতা নষ্ট করে এবং আশপাশের গাছপালার জন্য পানি সংকট তৈরি করে।
উপরন্তু, এর পাতা ও মূল থেকে নির্গত নির্দিষ্ট রাসায়নিক পদার্থ আশেপাশের গাছগুলোর বৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত করে। এটি মাটিকে অনুর্বরও করে তোলে, যার ফলে ওই অঞ্চলে অন্যান্য গাছপালা জন্মাতে পারে না।
অন্যদিকে, আকাশমণির আচরণ আগ্রাসী, খুব দ্রুত বেড়ে ওঠে এবং আশপাশের গাছগুলোর জন্য স্থান, আলো ও পুষ্টি উপাদান দখল করে নেয়, আশপাশের অন্যান্য গাছ ও উদ্ভিদের বেড়ে ওঠায় বাধা দেয়, ফলে জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি হয়।
আকাশমণির শিকড় অনেকটাই উপরের দিকে থাকে, তাই এটি সহজেই পড়ে গিয়ে প্রাণহানি বা ক্ষতি করতে পারে।
আকাশমণি আমাদের দেশীয় গাছ নয়। আমাদের প্রকৃতিবিরুদ্ধ। পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। দেশের পাখিসহ জীবজগৎকে বাঁচানোর জন্য এই গাছ রোপণ না করে আদি দেশীয় প্রজাতির গাছ রোপণ করা জরুরি।’’
আকাশমণি গাছের ফুলের রেণু বাতাসে ভেসে বেড়ায়। মানুষের ফুসফুসের ক্ষতি করে। শ্বাসকষ্টজাতীয় সমস্যার সৃষ্টি করে।
গাছের পাতা মাটিতে পড়ে সহজে পচে না। গাছের নিচে কোনো আবাদও হয় না।এ গাছের ফল পাখিতে খায় না। পাখি বাসাও বাঁধে না।
বৈশ্বিক উষ্ণতা নিরাময়ে দেশীয় উদ্ভিদ দিয়ে দেশ সাজাই।মানব সভ্যতায় উদ্ভিদের অবদান অপরিসীম। সভ্যতার ঊষালগ্ন থেকে উদ্ভিদ
আমাদেরকে অনেক ধরনের প্রয়োজনীয় উপকরণ ও সেবা দিয়ে আসছে।আজ আমাদের নানামুখী কর্মকাণ্ডের কারণে প্রকৃতি থেকে উদ্ভিদগুলো হারিয়ে যাচ্ছে। পরিণামে বৈশ্বিক উষ্ণতা বেড়ে চলছে। আমরা প্রতিবছর বৃক্ষ রোপণের মাধ্যমে আমাদের হারিয়ে যাওয়া উদ্ভিদগুলোকে প্রকৃতিতে পুনরায় ফিরিয়ে আনতে পারি এবং বৈশ্বিক উষ্ণতা নিরাময়ে ভূমিকা রাখতে পারি ।
আমরা বেশি পরিমাণে বিপন্ন বনজ বৃক্ষ লাগাতে পারি যেমন- গর্জন,তেলসুর, চাপালিশ, বাটনা, বৈলাম, সিভিট, ঢাকিজাম, পিতরাজ,তুন, রক্তন, চুন্দুল, আউয়াল, বনাক, কদম, গামারি, শাল, কড়ই
ইত্যাদি ।
আমরা অধিক পরিমাণে দেশীয় ফলজ বৃক্ষ লাগাতে পারি যেমন- আম,
জাম, কাঁঠাল, নারিকেল, তাল, পেয়ারা, লেবু, জাম্বুরা, লটকন,পানিয়ালা, ডেউয়া, কাউ, জলপাই, আমড়া, বরই ইত্যাদি।
আমরা বেশি পরিমাণে দেশীয় বিপন্ন ঔষধি উদ্ভিদ লাগাতে পারিযেমন- আমলকি, হরিতকি, বহেড়া, অর্জুন, নিম, উদাল, উলটকম্বল,তেঁতুল, কুরচি, ছাতিম, সাজনা, পুদিনা, কালমেঘ, বাসক, থানকুনি, উলটচন্ডাল, শতমূলী, সর্পগন্ধা, অশ্বগন্ধা ইত্যাদি।
আমরা অধিক হারে দেশীয় শোভাবর্ধনকারী ফুলের চারা লাগাতে পারি যেমন- পলাশ, শিমুল, সোনালু, লাল উদাল, জারুল, কুরচি, কদম,মাধবীলতা ইত্যাদি।
আসুন আমরা সবাই মিলে
নগর-প্রাণ প্রকৃতি সাজাই
সবুজে বাঁচি
সবুজ বাঁচাই।