মো: নাহিদ জুবায়ের, নিজস্ব প্রতিবেদক
রমজান মাসে সাওম পালন করার মূল উদ্দেশ্য হল শরীর এবং মনকে পবিত্র করা এবং পাশাপাশি আল্লাহর প্রতি আনুগত্য ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা। সাওমের মাধ্যমে মুসলমানরা পানাহার করে ক্ষুধা-তৃষ্ণার মোকাবিলা করেন এবং নিজেদের দেহ ও মনকে শুদ্ধ করেন। এতে যেমন আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি পায় তেমনি সামাজিক সমব্যথা ও সহানুভূতির অনুভূতি তৈরি হয়। রোজা রাখার মাধ্যমে দরিদ্র ও অসহায়দের দুঃখ-কষ্টের প্রতি উপলব্ধি গড়ে ওঠে।
এছাড়া, রোজার মাধ্যমে মানসিক সংযমও অর্জিত হয় যা ব্যক্তিকে কুরুচিপূর্ণ আচরণ, মিথ্যা বলা, গালি-গালাজ ইত্যাদি থেকে বিরত থাকতে শেখায়। এটি সত্যিকার অর্থে আত্মসমীক্ষা ও আত্মশুদ্ধির প্রক্রিয়া।
রমজান মাসের শেষে ঈদ-উল-ফিতর উদযাপন করা হয়, যা মুসলমানদের জন্য এক উৎসবের দিন। ঈদ মানে উৎসব বা আনন্দ এবং এটি ইসলামিক ক্যালেন্ডারের অন্যতম আনন্দদায়ক দিন হিসেবে গণ্য হয়। ঈদ-উল-ফিতরের দিন মুসলমানরা একে অপরকে শুভেচ্ছা জানাতে ও পরিবারের সদস্যদের সাথে মিলিত হয়ে আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে একত্রিত হন। এই দিনটি বিশেষভাবে মুসলিমদের একতার ও সম্প্রতির প্রতীক।
ঈদ-উল-ফিতর উদযাপন শুধু ধর্মীয় নয় এটি সামাজিক ঐক্য, পারস্পরিক সহানুভূতি ও মানবিক মূল্যবোধের উৎসবও বটে। মুসলমানরা ঈদের দিনে দরিদ্রদের জন্য জাকাতুল ফিতরা(ঈদের দান) প্রদান করে, যা সমাজে ভারসাম্য এবং সমৃদ্ধি আনতে সাহায্য করে। এই দানের মাধ্যমে, ঈদের আনন্দ শুধু ব্যক্তিগত নয়, বৃহত্তর সমাজের মাঝে ছড়িয়ে পড়ে।
রমজান মাসের সাওম এক ইতিহাস বহন করে যা মুসলিমদের জন্য পূণ্য অর্জনের একটি উপায়। এটি শুধুমাত্র দেহের সংযম নয় এটি আত্মার পরিশুদ্ধির মাধ্যম। ইসলামে প্রতিটি কাজ যদি আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে করা হয়, তবে তা পূণ্য অর্জনের পথ হয়ে দাঁড়ায়। রোজা রাখার মাধ্যমে মুসলমানরা একদিকে যেমন আল্লাহর নৈকট্য লাভ করেন। তেমনি মানুষের প্রতি সহানুভূতির পরিচয় দেন। ইতিহাসে দেখা যায়, ইসলামি যুগে সাওমের মাধ্যমে সমাজে দরিদ্রদের সাহায্য, শোষিতদের অধিকারের প্রতি যত্নশীলতা এবং মানবাধিকার রক্ষা করা হয়েছে।
এই পূণ্য ইতিহাসের পেছনে রয়েছে প্রিয় নবী মুহাম্মদ (সাঃ) এর জীবন ও তাঁর শিক্ষাগুলো যা আজও মুসলমানদের জীবনে প্রতিফলিত হয়। রমজান মাসে রোজা রাখার সময় বিভিন্ন ধর্মীয় উপলব্ধি, ভ্রাতৃত্ববোধ ও সংযমের আদর্শের গুরুত্ব বাড়িয়ে তোলে যা সমাজের বিভিন্ন স্তরের মধ্যে ঐক্য সৃষ্টি করতে সাহায্য করে।
ঈদ মোবারক কেবল আনন্দের দিন নয় বরং এটি আমাদের ঈমান, আত্মশুদ্ধি এবং সামাজিক দায়িত্ববোধের গভীরতা উপলব্ধি করার একটি উপলক্ষ। সাওমের মাধ্যমে শৃঙ্খলা, সংযম এবং সহানুভূতির শিক্ষার প্রতিফলন ঘটে এবং ঈদ আমাদের শেখায় কিভাবে পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা প্রতিষ্ঠিত করা যায়। এই দিনটি আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে, ঈদ হল এক নতুন শুরু। যেখানে আমরা নিজেদের ভুল-ত্রুটি থেকে শিক্ষা নিয়ে, সমাজে একতা ও শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে পারি।