শায়লা আক্তার মীম
শবে বরাত ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের জন্য একটি বিশেষ রাত। হিজরি সালের শাবান মাসের ১৪ তারিখ দিবাগত রাতটি মুসলমানরা শবে বরাত বা সৌভাগ্যের রজনী হিসেবে পালন করে থাকেন। রাতটি ‘লাইলাতুল বরাত’ হিসেবেও পরিচিত।
তবে শবে বরাত পুরান ঢাকার মানুষ অত্যন্ত ভক্তি ও আনন্দের সঙ্গে ভিন্নভাবে উদযাপন করে। এই রাতকে ভাগ্য নির্ধারণের রাত হিসেবে গণ্য করা হয়, যেখানে মুসলিমরা আল্লাহর রহমত ও মাগফিরাত কামনা করে। পুরান ঢাকার শবে বরাতের উৎসব ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতার পাশাপাশি ঐতিহ্যবাহী খাবার, আতশবাজি, ফেন্সি রুটি এবং সামাজিক মিলনমেলায় রূপ নেয়।
শবে বরাতের রাতে পুরান ঢাকার মসজিদগুলোতে ভিড় লেগে যায়। বায়তুল মোকাররম, চকবাজার শাহী মসজিদ, হোসেনি দালানসহ বিভিন্ন মসজিদে নামাজ, কুরআন তিলাওয়াত ও বিশেষ মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়। মুসল্লিরা এই রাতে নফল নামাজ আদায় করেন এবং কবরস্থানে গিয়ে প্রয়াত স্বজনদের জন্য দোয়া করেন।
পুরান ঢাকার শবে বরাত মানেই বিশেষ কিছু খাবার। হালুয়া-রুটি, ফিরনি, সেমাই, মিষ্টি, পোলাও-মাংসসহ নানা সুস্বাদু খাবার তৈরি করা হয়। বিশেষভাবে, ফেন্সি রুটি এই রাতের অন্যতম আকর্ষণ। ময়দা, দুধ, চিনি, ঘি, সুগন্ধি উপকরণ দিয়ে তৈরি ফেন্সি রুটি শবে বরাতে পুরান ঢাকার ঘরে ঘরে পরিবেশিত হয়। চকবাজার, নবাবপুর,লক্ষ্মীবাজার,সুত্রাপুর, পোস্তগোলা দোকানগুলোতে হালুয়া-রুটি ও ফেন্সি রুটির কেনাবেচা চোখে পড়ার মতো।
পুরান ঢাকার শবে বরাত মানেই আতশবাজির রঙিন আলোয় আলোকিত আকাশ। বিশেষ করে চকবাজার, ইসলামপুর, লালবাগ, সূত্রাপুরের,পোস্তগোলা বিভিন্ন স্থানে তরুণরা আতশবাজি ফোটায়।তবে কালের বিবর্তনে উৎসবের এই আমেজ কমে এসেছে। যদিও এটি বিতর্কিত তবুও এটি পুরান ঢাকার শবে বরাতের ঐতিহ্যের অংশ হয়ে গেছে।
এই রাতে আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব একত্রিত হয়ে সময় কাটান। প্রতিবেশীদের মাঝে খাবার বিতরণ করা হয়। অনেক পরিবার দরিদ্রদের মাঝে খাবার ও সদকা বিতরণ করে।
পুরান ঢাকার শবে বরাত শুধু একটি ধর্মীয় উৎসব নয় এটি একটি সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য, যা পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী জীবনধারার প্রতিফলন ঘটায়। যদিও আধুনিকতার ছোঁয়ায় কিছু কিছু রীতি পরিবর্তিত হচ্ছে, তবুও ধর্মীয় ভক্তি, ঐতিহ্যবাহী খাবার এবং সামাজিক উৎসব মিলিয়ে শবে বরাত পুরান ঢাকাবাসীর হৃদয়ে বিশেষ স্থান ধরে রেখেছে।