দীর্ঘ শুনানির পর কলারোয়ার নিকাহ রেজিস্টার পুত্র তামিম হাসানকে নিয়োগের নির্দেশ হাইকোর্টের

স্টাফ রিপোর্টার, সাতক্ষীরা:

দীর্ঘ শুনানির পর সাতক্ষীরার কলারোয়া পৌরসভার ১, ২ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডের জন্য নিকাহ রেজিস্ট্রার হিসেবে তামিম হাসানকে নিয়োগ প্রদানের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। গত বৃহস্পতিবার (৬ ফেব্রুয়ারি) মাননীয় হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি ফারাহ মাহবুব এবং বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর সমন্বয়ে গঠিত ডিভিশন বেঞ্চ রুলটি চূড়ান্ত ঘোষণা করেন।

বিতর্কিত নিয়োগ অবৈধ ঘোষণা:
মামলার বিবরণ অনুযায়ী, ২০২৩ সালের ৫ মার্চ তামিম হাসান হাইকোর্টে রিট পিটিশন দাখিল করেন। এতে তিনি অভিযোগ করেন, তার বাবা মরহুম মাওলানা শেখ কামরুল ইসলাম ১৭ বছর ধরে কলারোয়া পৌরসভার ১, ২ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডের নিকাহ রেজিস্ট্রার ছিলেন। ২০২১ সালের ১৪ জুন করোনায় আক্রান্ত হয়ে তার মৃত্যু হলে, বিধি অনুসারে তার সন্তান হিসেবে তামিম হাসানের নিয়োগ পাওয়ার কথা থাকলেও, পার্শ্ববর্তী কলারোয়া পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ড গদখালি গ্রামের স্থায়ী বাসিন্দা কামরুল ইসলাম বাবু নামের এক ব্যক্তি এই পদে নিয়োগ পান।

নিয়োগ প্রক্রিয়ার বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হলে, আদালত সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে কারণ দর্শানোর নির্দেশ দেন। দীর্ঘ শুনানি শেষে আদালত রায় দেন যে, আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের স্মারক নং ১০.০০.০০০.১৩১.১১.০১৩.৮৮(১)-৮৪, তারিখ ২৮/২/২০২৩ অনুসারে বিবাদী কামরুল ইসলাম বাবুর নিয়োগ আইনগত কর্তৃত্ব ছাড়াই জারি করা হয়েছে এবং এর কোনো আইনি কার্যকারিতা নেই।

তামিম হাসানের পক্ষে রায়:
আদালতের চূড়ান্ত রায় অনুযায়ী, কলারোয়া পৌরসভার ১, ২ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডের নিকাহ রেজিস্ট্রার হিসেবে তামিম হাসানকে নিয়োগ দিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

রিট আবেদনকারীর প্রতিক্রিয়া:
রায়ের পর তামিম হাসান ও তার পরিবার সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, “আমার বাবা দীর্ঘ ১৭ বছর এই দায়িত্ব পালন করেছেন। তার মৃত্যুর পর আমি ও আমার পরিবার আর্থিক সংকটে পড়েছিলাম। আদালতের এই রায় আমাদের জন্য ন্যায়বিচারের প্রতিফলন। আমি আদালত ও সংশ্লিষ্ট সকলকে ধন্যবাদ জানাই।“

বিতর্কিত নিয়োগের পেছনের কাহিনী:
রিট পিটিশনে অভিযোগ করা হয়েছিল যে, বিবাদী কামরুল ইসলাম বাবু মূলত কলারোয়া পৌরসভার ৩, ৪ ও ৫ নম্বর ওয়ার্ডের নিকাহ রেজিস্টার আমিরুল ইসলামের ছেলে। কিন্তু তিনি তার এনআইডি পরিবর্তন করে ১, ২ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা হিসেবে আবেদন করেন এবং নিয়োগ পান। বিষয়টি আদালত পর্যবেক্ষণের পর তার নিয়োগকে অবৈধ ঘোষণা করেন এবং তামিম হাসানের নিয়োগের নির্দেশ দেন।

বাংলাদেশ মুসলিম নিকাহ রেজিস্ট্রার কল্যাণ সমিতির অভিমত:
মহান আল্লাহর রহমতে মহামান্য হাইকোর্ট সাতক্ষীরা জেলার কলারোয়া পৌরসভার ১, ২ ও ৯ নং ওয়ার্ডে ২৮-০২-২০২৩ তারিখে কামরুল ইসলামের নামে ইস্যুকৃত নিকাহ রেজিস্ট্রার লাইসেন্স বাতিল করে তদস্থলে (পিতার স্থলে পুত্রকে) মৃত কাজীর পুত্র তামিম হাসান’কে লাইসেন্স প্রদানের জন্য রায় ও নির্দেশনা প্রদান করেছেন। আলহামদুলিল্লাহ। এমতাবস্থায় এই রায় কার্যকর করে প্রতিটি এলাকায় পিতারস্থলে পুত্রকে লাইসেন্স প্রদান নিশ্চিত করার জন্য বাংলাদেশ মুসলিম নিকাহ রেজিস্ট্রার সমিতি এবং বাংলাদেশ মুসলিম নিকাহ রেজিস্ট্রার কল্যাণ সমিতির সার্বিক সহযোগিতা কামনা করছি। ধন্যবাদান্তে-এডমিন ও সভাপতি: রাজশাহী বিভাগীয় নিকাহ রেজিস্ট্রার সমিতি।

এই রায় নিকাহ রেজিস্ট্রার নিয়োগের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও ন্যায়বিচারের দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। তামিম হাসানের নিয়োগ বাস্তবায়নের মাধ্যমে আদালতের রায়ের চূড়ান্ত কার্যকর হবে বলে আশা করেন সাতক্ষীরা কলারোয়া পৌরসভার ১, ২ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা এবং সুধীজন সহ এলাকাবাসী

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *