আজ ঐতিহাসিক বদর দিবস

মোহাম্মদ ফাইজুল্লাহ, নিজস্ব প্রতিনিধি:

আজ ১৭ রমজান। ইসলামের ইতিহাসে আজ অতি গুরুত্বপূর্ণ একটি দিন। আজ থেকে দেড় হাজার বছর আগে এই দিনে সংঘটিত হয়েছিল ঐতিহাসিক বদরের যুদ্ধ। বদরের যুদ্ধ ইসলামের ইতিহাসে অতিশয় তাৎপর্যপূর্ণ এবং অবিস্মরণীয় ঘটনাগুলোর মধ্যে অন্যতম । ২৬ জুলাই ৬২৩ খ্রিষ্টাব্দ মোতাবেক ১৭ রমজান ২য় হিজরি মুসলমান এবং কুরাইশদের মাঝে বদরের প্রান্তরে যে যুদ্ধ হয়েছিল ইসলামের ইতিহাসে সেটাই ঐতিহাসিক বদরের যুদ্ধ নামে অধিক পরিচিত ।
মদিনা থেকে প্রায় ৮০ মাইল দক্ষিণ-পশ্চিমে দিকে বদর প্রান্তরের অবস্থান।

রাসূল সা. এর যুগে ছোটো বড়ো মিলিয়ে কমবেশি ৮৯টি যুদ্ধাভিযান সংগঠিত হয়। তবে ইতিহাস থেকে প্রমাণিত রাসূল সা. স্বেচ্ছায় কোনো যুদ্ধে লিপ্ত হননি। কারো বিরুদ্ধে তলোয়ারের শক্তি ব্যবহার করেন নি। ইসলাম প্রচারে তাঁর মূল হাতিয়ার ছিল আল্লাহর প্রতি অগাধ বিশ্বাস এবং মানবতার প্রতি উদারতা। তাঁর ব্যবহার দেখেই মানুষ আকৃষ্ট হয়ে ইসলামে এসেছে। তাঁর যুদ্ধ ছিল আত্মরক্ষামূলক, অন্যায়ের বিরুদ্ধে, অসত্যের বিরুদ্ধে, শোষণের বিরুদ্ধে। কাফিরদের অত্যাচারের সীমা যখন ছাড়িয়ে যাচ্ছিলো তখন আল্লাহর নির্দেশে তিনি কাফিরদের বিরুদ্ধে অভিযানে নামেন। বদরের যুদ্ধ ছিল ইসলামের ইতিহাসে সবচেয়ে বড়ো যুদ্ধ। যদি মুসলমানরা এ যুদ্ধে পরাজিত হতেন তবে ইসলাম জগতের বুক থেকে কয়েক শত বা কয়েক হাজার বছর পিছিয়ে যেতো বলে মনে করা হয়। কারণ এটি কোনো রাজ্য বিজয়ের যুদ্ধ ছিল না। বরং এটি ছিল ইমান বা বিশ্বাসের সাথে অবিশ্বাসের লড়াই।

বদরের যুদ্ধ ছিল হক এবং বাতিলের মাঝে প্রথম মীমাংসাকারী সামরিক অভিযান। কুরাইশরা মর্মে মর্মে বুঝতে পেরেছিল, মদিনায় নব প্রতিষ্ঠিত ইসলামের দুর্নিবার শক্তিকে সমূলে ধ্বংস করতে না পারলে তাদের পতন অনিবার্য। এরই জের ধরে মুসলমানদের বিরুদ্ধে কুরাইশদের প্রথম মিলিত আক্রমণ হলো ঐতিহাসিক বদরের যুদ্ধ। ইসলামের ইতিহাসে এটি প্রথম প্রকাশ্য ঘোষিত সশস্ত্র যুদ্ধ, যে যুদ্ধে কুরাইশদের সাথে মুসলমানদের প্রচণ্ড মুকাবিলা করতে হয়। এ যুদ্ধে কুরাইশদের সংখ্যা ছিল একহাজার আর মুসলমানদের তিনশ এর কিছু বেশি।

এ যুদ্ধে ইবলিস শয়তান সরাসরি মানুষের রূপ ধরে তার বাহিনী নিয়ে পৃথিবীতে এসেছিল। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন এ যুদ্ধে কুরাইশদের মোকাবেলায় হজরত জিবরাঈল ও মিকাঈল আ. এর নেতৃত্বে ফেরেশতাদের বাহিনী পাঠিয়ে দিয়েছিলেন। ইমাম ইবনে জারীর হজরত ইবনে আব্বাস রা. এর রেওয়াতের উদ্ধৃতি দিয়ে লিখেছেন, ‘শয়তান যখন মানুষের আকৃতিতে সুরাকা ইবনে মালিকের রূপ ধরে নিজ বাহিনীর নেতৃত্ব দিচ্ছিল তখন সে ফেরেশতাদের বাহিনী দেখে ভয় পেলো। যখন সে বুঝলো তার আর বাঁচার সুযোগ নেই। তখন সে তার বাহিনী নিয়ে পালিয়ে গেল’।
মূল কথা হলো বদরের যুদ্ধে আল্লাহর সাহায্য সরাসরি প্রত্যক্ষ করা গিয়েছিল। যুদ্ধের আগের রাতে রাসূল সা. সারাররাত জেগে তাহাজ্জুদের নামাজে নিমজ্জিত ছিলেন। ঐ রাতে প্রচণ্ড বৃষ্টি হয়। কুরাইশরা যে জায়গায় অবস্থান করছিল সেখান দিয়ে প্রচণ্ড ঝড় বয়ে যায়। কাফিররা তখন উপত্যকার নিচের দিকে অবস্থান করছিল , ফলে সেখানে বৃষ্টির পানি জমা হয়ে কাদার সৃষ্টি করে। এতে কাফেররা ঠিকমতো দাঁড়াতে পারছিল না।
যুদ্ধের আগে আল্লাহর রাসূল সা. সাহাবাদের নিয়ে আল্লাহর দরবারে দোয়া করলেন। দোয়ায় রাসূল সা. এতো গভীরে চলে গেলেন এবং কান্না-কাটি করলেন যে তাঁর শরীর থেকে চাদর মোবারক পড়ে যায়। হজরত আবু বকর রা. পুনরায় তাঁর শরীরে চাদর পড়িয়ে দেন। মহান আল্লাহ রাসূল সা. এর দোয়া কবুল করেছিলেন।
এরপর কাফিরদের সাথে ঈমাদদারদের প্রচণ্ড যুদ্ধ হয়। সেই যুদ্ধে মুসলমানরা বিজয়ী হন। এ যুদ্ধে কাফিরদের ৭০ জন নিহত হয়। আর এতে ১৪ জন সাহাবা শাহাদাত বরণ করেন। তাদের বদরের প্রান্তরেই দাফন করা হয়।

বদরের যুদ্ধ মুসলমানদের জন্য কিয়ামত পর্যন্ত একটি অনন্য শিক্ষার বিষয়। এখান থেকে মুসলমানরা জানতে পারেন আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে সৈন্য সংখ্যা কম বেশি কোনো বিষয় নয়। বরং আল্লাহর সাহায্য আর ঈমানী চেতনাই মূল বিষয়। আল্লাহর সাহায্য থাকলে যেকোনো কঠিন পরিস্থিতি খুব সহজেই মোকাবেলা করা যায়। কাফের আর তাদের দোসররা যতই ষড়যন্ত্র করুক না কেনো তারা আল্লাহর দ্বিনের কোনো ক্ষতি করতে পারবে না। এটা আল্লাহর ওয়াদা। সূরা সফের ৮ নম্বর আয়াতে আল্লাহ বলছেন, “এ লোকেরা তাদের মুখের ফুঁ দিয়ে আল্লাহর নূরকে নিভিয়ে দিতে চায়, অথচ আল্লাহ তাঁর এ নূর পরিপূর্ণ করে দিতে চান, কাফেররা তা যতোই অপছন্দ করুক”।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *